নিহত ভাইকে ঘিরে মামলা-বাণিজ্যের অভিযোগে বিতর্কের কেন্দ্রে আ.লীগ নেতা আপেল মিয়া
হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জ উপজেলার কাকাইলছেও ও আনন্দপুরে সংঘটিত নজিরবিহীন সংঘর্ষের রেশ কাটতে না কাটতেই এবার আলোচনায় এসেছে মামলা-বাণিজ্য ও রাজনৈতিক ফায়দা লুটের গুরুতর অভিযোগ। সংঘর্ষে হৃদরোগে নিহত রাসেল মিয়াকে ঘিরে তাঁরই ভাই, কাকাইলছেও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আপেল মিয়ার বিরুদ্ধে ভয়াবহ অভিযোগ তুলেছেন স্থানীয়রা। প্রথম ৯৩ আসামী করা হলেও আসামী নেমে আসে ৮৭জনে বাকীদের জনপ্রতি ২লাখ করে টাকা নিয়ে নাম বাদ দেয় আপেল।
পুলিশের প্রাথমিক সুরতহাল ও রিপোর্টে রাসেল মিয়ার শরীরে কোনো আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। ওই রিপোর্টে স্বাক্ষর করেন নিহতের ভাই আপেল মিয়াসহ তাঁর পক্ষের লোকজন। স্থানীয় সূত্রের ভাষ্য অনুযায়ী, সংঘর্ষের সময় উত্তেজনা ও চিৎকারের মধ্যে হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়েই রাসেল মিয়ার মৃত্যু ঘটে।
এরপরই মামলা, আসামি প্রায় শতাধিক কিন্তু ঘটনার কয়েকদিনের মধ্যেই দৃশ্যপট পাল্টে যায়। নিহতের ভাই আপেল মিয়া বাদী হয়ে লুটপাট ও হত্যার অভিযোগে প্রায় ১০০ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন। মামলার তালিকায় উঠে আসে আল কোরআন সওদাগর পরিবারের লোকজন ও তাঁদের পক্ষের একাধিক নাম।
‘নাম কাটাতে টাকা’—খোলাবাজারে মামলা বাণিজ্যের অভিযোগ স্থানীয়দের , এই মামলাকে ঘিরেই শুরু হয় খোলাবাজারে দরদাম। আসামিদের কাছ থেকে প্রতি জনের কাছ থেকে প্রায় ২ লাখ টাকা করে নেওয়া হচ্ছে, আর এর বিনিময়ে মামলা থেকে নাম বাদ দেওয়া হচ্ছে। এভাবেই নিহত ভাইয়ের মৃত্যুকে পুঁজি করে ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিক লাভের হাতিয়ার বানানো হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে আপেল মিয়ার বিরুদ্ধে।
গ্রামীণ রাজনীতির শিকার সাংবাদিকও, এই মামলায় স্থানীয় সাংবাদিক আমিনুল ইসলাম আপনকেও আসামি করা হয়েছে, যিনি ঘটনার সময় পেশাগত দায়িত্বে নিউজ সংগ্রহে ব্যস্ত ছিলেন। স্থানীয় সাংবাদিক মহলে এ নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। অনেকের মতে, এটি স্পষ্টতই গ্রামীণ রাজনীতির প্রতিহিংসামূলক অপব্যবহার।
রাজনৈতিক ফায়দা: বিএনপির দ্বন্দ্ব, সুবিধা আ.লীগের
স্থানীয় রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, বিএনপির দুই গ্রুপের সংঘর্ষ সামনে থাকলেও, শেষ পর্যন্ত মামলার মাধ্যমে সুবিধা নিচ্ছে আওয়ামী লীগের একটি প্রভাবশালী অংশ। আপেল মিয়ার ভূমিকা সেই অভিযোগকে আরও জোরালো করেছে।
এলাকাবাসীর প্রশ্ন—
যদি মৃত্যু হৃদ্রোগে হয়ে থাকে,
যদি প্রাথমিক রিপোর্টে আঘাতের চিহ্ন না থাকে,
তাহলে এত বড় মামলা, এত আসামি, এত লেনদেন কেন?
এলাকাবাসী ও সচেতন মহল এই ঘটনার নিরপেক্ষ পুনঃতদন্ত, মামলা-বাণিজ্যের অভিযোগ খতিয়ে দেখা এবং রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত বিচারিক ব্যবস্থা নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন।
