বাল্লা রেলস্টেশন থেকে শায়েস্তাগঞ্জ পর্যন্ত এই ট্রেন চলাচল করত। চা বাগানের শ্রমিক, স্থানীয় ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে সাধারণ যাত্রী—সবার জন্যই এটি ছিল সহজলভ্য ও সাশ্রয়ী পরিবহন। ছোট আকারের ইঞ্জিন এবং মাত্র কয়েকটি বগি নিয়ে প্রতিদিন নিয়মিত চলত এই ট্রেন। গ্রামের মানুষ থেকে শহরের বাসিন্দা—সবাই এই ট্রেনের সাথে জড়িত ছিল নানা স্মৃতিতে।
শুধু যাতায়াত নয়, এই ট্রেন হবিগঞ্জের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে বিশেষ অবদান রেখেছে। চা, ধান, মাছসহ নানান পণ্য স্বল্প খরচে বাজারে পৌঁছে যেত বাল্লার ট্রেনের মাধ্যমে। ব্যবসায়ীরা নিয়মিত এই ট্রেন ব্যবহার করতেন, যা স্থানীয় বাণিজ্যকে গতিশীল করেছিল।
এটি ছিল হবিগঞ্জের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক জীবনেরও অংশ। অনেকের জন্য বাল্লার ট্রেন শুধু পরিবহন নয়—ছিল জীবনের গল্প, ভালোবাসার স্মৃতি, কিংবা শৈশবের আনন্দযাত্রা।
কিন্তু সময়ের সাথে সাথে ট্রেনটির অবকাঠামো জীর্ণ হয়ে পড়ে। লোকসান, যাত্রী সংখ্যা হ্রাস এবং আধুনিক সড়ক পরিবহনের প্রসারের কারণে ২০০২ সালে বন্ধ হয়ে যায় এই ঐতিহ্যবাহী পরিবহন ব্যবস্থা। বন্ধ হওয়ার পর থেকে বাল্লার ট্রেন কেবলই ইতিহাসের পাতায় স্থান করে নিয়েছে।
বর্তমানে হবিগঞ্জের কিছু রেস্তোরাঁ এবং সাংস্কৃতিক স্থাপনায় বাল্লার ট্রেনের মডেল ও ছবি প্রদর্শিত হয়, যাতে নতুন প্রজন্ম জানতে পারে এই অঞ্চলের পরিবহন ঐতিহ্যের গল্প। স্থানীয় ইতিহাসবিদদের মতে, বাল্লার ট্রেন কেবল পরিবহন ছিল না; এটি ছিল হবিগঞ্জের অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক উন্নয়নের এক জীবন্ত সাক্ষী, যা আজও অনেকের হৃদয়ে নস্টালজিয়ার মতো বেঁচে আছে।
